নারী : নানা প্রেক্ষিত (OLD)

পুরাতন বইয়ের প্রতিটি অর্ডার প্যাকেজিং এর সময় বইয়ের ছবি/ভিডিও পাঠানো হয়। বইয়ের কন্ডিশন দেখতে আপনার অর্ডার নাম্বারটি আমাদের ফেসবুক পেইজে ইনবক্স করুন।

280

1 in stock

Add to Wishlist
Add to Wishlist

Description

এ গ্রন্থের নামকরণ থেকেই বিষয়বস্তু সম্পর্কে আভাস পাওয়া যাবে। নারীর অবস্থা ও অবস্থান এবং নারী ইস্যুকে সমাজ-অর্থনীতি, ধর্ম-দর্শন, শিল্প-সাহিত্য এবং লোকজীবনের বহুমাত্রিক পরিপ্রেক্ষিতে দেখা ও বোঝার চেষ্টা। বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রধান উদ্বেগের একটি বিষয় হচ্ছে নারী উন্নয়ন ইস্যু। দারিদ্র্য, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, বিশ্বায়ন, উন্নয়ন, পরিবেশ, সন্ত্রাস এবং নারী উন্নয়নের বিষয়টি জাতিসংঘসহ কম-বেশি পৃথিবীর প্রায় সবদেশেরই কেন্দ্রীয় ভাবনা ও এজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত শতাব্দীর শেষ দশক থেকে বাংলাদেশেও নারীর প্রতি সহিংসতা ও বৈষম্যরোধ এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রশ্নটি তীর্যকভাবে সামনে এসেছে। এর কারণ, পালাক্রমে দু’জন নারী রাষ্ট্রক্ষমতার শীর্ষে অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রিত্বের আসনে ছিলেন- এমনটি নয়। কারণ দুটো, প্রথমত বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী সর্ববৃহৎ খাত পোশাক শিল্পে প্রায় একচেটিয়াভাবে নারী শ্রমিকের অবস্থান এবং দ্বিতীয়ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নারী শিক্ষার প্রসার এবং এনজিও কার্যক্রমের ভেতর দিয়ে গ্রামীণ জীবনে নারীর বর্ধিত ভূমিকা। এ দুটো ব্যাপারই নারীর অধিকার সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে এবং রাষ্ট্রসমাজ ও অর্থনীতিতে নারীর অধিকতর অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত তৈরি করছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র নারীর প্রতি বৈষম্য, সহিংসতা এবং তার অধস্তন অবস্থার অবসান এখন মানব জাতির সাধারণ দাবিতে পরিণত হয়েছে। কেবল পশ্চাৎপদ, দরিদ্র ও উন্নয়নকামী দেশ নয়, বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ও ক্ষমতাধর দেশগুলোতেও নারীর অধস্তন অবস্থা উপেক্ষণীয় নয়। পুরুষতন্ত্রের দোর্দ- প্রতাপ উন্নত দেশগুলো, যেখানে নারী আপেক্ষিকভাবে মুক্ত, স্বাধীন এবং কর্মবৃত্তে সমভাবে অংশীদার সেখানেও আড়াল করা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি বা প্রাচ্যের জাপান ও রাশিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোর কোথাও ক্ষমতাবলয়ে, রাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণে বা সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীর দৃশ্যমান কোনো অংশগ্রহণ নেই। এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নকামী দেশগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য। বিচ্ছিন্নভাবে কোনো কোনো দেশে রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান নারী হয়েছে বলে পরিস্থিতির মৌলিক কোনো হেরফের হয়েছে, এমনটি ভাবার অবকাশ নেই। নারীর স্বাধীনতা ও তার মর্যাদার প্রশ্নে ধর্ম সবসময় একটা প্রতিবন্ধক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। সংস্কার ও বিবর্তনের ফলে খ্রিস্টান, হিন্দু বা বৌদ্ধদের মধ্যে নারী যতটা মুক্ত, মুসলমান বিশ্বে পরিস্থিতি ততটাই ভয়াবহ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামি মৌলবাদের প্রবল উত্থান ও তাদের সহিংস কর্মকা- এ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের দোহাই দিয়ে নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা নতুন এক বিচ্ছিন্নতাবোধের সৃষ্টি করেছে। নাইন ইলেভেন নামক দানবীয় ঘটনার পর পশ্চিমে সমগ্র মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের প্রতি যে বিদ্বেষ ও সন্দেহের সৃষ্টি হয় তা মতাদর্শ নির্বিশেষে সকল মুসলমানের আত্মাভিমানে আঘাত হানে। আল কায়েদা ঠেকানো এবং মানব বিধ্বংসী অস্ত্রভা-ার ধ্বংসের অজুহাতে মার্কিনীদের আফগানিস্তান ও ইরাক দখলের ঘটনা এ আত্মাভিমানকে প্রবল করে তুলেছে। এটা যেন হান্টিংটনের বিকৃত তত্ত্বের অনুসৃতি; ইসলামের সঙ্গে পশ্চিমা সভ্যতার সংঘাত! আফগানিস্তান ও ইরাকের মানবিক বিপর্যয়ের অসহায় শিকার যে ওই দু’টি দেশের নারী ও শিশু- এই সত্য কিন্তু বিশ্বসম্প্রদায় প্রায় ভুলেই বসে আছে। একথা সত্য মৌলবাদী উত্থানের পাশাপাশি মুসলিম বিশ্বে ইসলামি চিন্তায় সৃজনশীল ইজতিহাদের নতুন ভাবনার উন্মেষও এখন দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার অচলায়তন ভেঙে অনেক বিদুষী নারী ধর্মাশ্রয়ী মুসলমান পুরুষতন্ত্রকে যেমন চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে, তেমনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অনেক প-িত নবম-একাদশ শতাব্দীর মোতাজিলা চিন্তার পুনরুত্থানের মাধ্যমে ইসলামি চিন্তার বন্ধ্যাত্ব মোচনে ব্রতী হয়েছেন। এ গ্রন্থে নারী প্রশ্নকে ধর্ম-দর্শনের নিরিখে এবং পুরুষতন্ত্রের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশে ‘নারী’ প্রশ্নে ইতিমধ্যে অনেক গবষেণা, লেখালেখি ও আলোচনা হয়েছে এবং হচ্ছে। প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু মূল্যবান গ্রন্থ ও গবেষণা অভিসন্দর্ভ। এ গ্রন্থে নারী প্রসঙ্গ আলোচনার ব্যতিক্রম এখানে যে, এতে কেবল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীর ক্ষমতায়ন বা প্রচলিত অর্থে নারীর প্রতি বৈষম্য বা নারী নির্যাতনের কাহিনী অবলম্বন করা হয়নি। বাংলাদেশে নারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান (জাহেদা আহমদ) নির্দেশের পাশাপাশি নারী প্রশ্নের দার্শনিক ব্যাখ্যা (যতীন সরকার), বৈদিক ও সংস্কৃত সাহিত্যে (নিরঞ্জন অধিকারী) এবং কোরআনে (নূহ-উল আলম লেনিন) নারীর অবস্থানের সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। অন্যদিকে কয়েকটি প্রবন্ধে আধুনিক বাংলা ও উর্দু সাহিত্যে নারীবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। অভিবাসীদের রাষ্ট্রভাষা উর্দুর প্রতি আমাদের এক ধরনের অনীহা ও বিদ্বেষ, ওই ভাষার সাহিত্য-কর্ম সম্পর্কে উদাসীন করে রেখেছিল। অসাধারণ কাজ করেছেন আবদুশ শাকুর, তিনি উর্দু কবিতায় নারীবাদী চৈতন্যের প্রকাশ উন্মোচন করতে গিয়ে পাকিস্তানি ভাবাদর্শ, প্রকারান্তরে বর্তমান পাকিস্তানে নারীর অবস্থানকে যেমন তুলে ধরেছেন, তেমনি উর্দু কবিতার অনুবাদে অনুপম দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। নারীর ভূমিকা, অবদান ও নারীর ওপর বৈষম্য অবলোপের প্রশ্নে মহাশ্বেতা দেবীর দৃষ্টিভঙ্গি, দ্রোহ এবং সাহিত্যকীর্তি কেবল নারীবাদের সীমায় আবদ্ধ নেই। তিনি শ্রেণিশোষণ কণ্টকিত সমাজব্যবস্থাকে পর্যন্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। রাধা চক্রবর্তী মহাশ্বেতাদেবীকে এবং তার সৃষ্টিকর্মের অন্তর্নিহিত সুর ও শৈলীটি ধরার চেষ্টা করেছেন অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে। সৌমিত্র শেখরের নিবন্ধে নজরুলের নারী ভাবনা ও তার দ্রোহ চেতনার শিল্পিত প্রকাশ ঘটেছে অনবদ্য ভঙ্গিতে। কবি ও শিল্প সমালোচক রবিউল হুসাইন তার নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধে বাংলাদেশের চিত্রশিল্পে নারী শিল্পীদের অবদান এবং খ্যাতিমান পুরুষ শিল্পীদের নারী-চিত্র অঙ্কন বিষয়ে মূল্যবান তথ্য পরিবেশন করেছেন। এইসঙ্গে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় নারী শিল্পীদের আঁকা ছবি এবং বিশিষ্ট পুরুষ শিল্পীদের চোখে নারী শীর্ষক ছবি পুনর্মুদ্রণ করায়, সামগ্রিকভাবে গ্রন্থটি সমৃদ্ধ হবে আশা করা যায়। একই কাজ, যদিও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে করেছেন শামীম আকতার চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রসঙ্গে। তিনি লিখেছেন পুরুষতন্ত্র ও বাণিজ্য কীভাবে নারীকে এ শিল্প থেকে স্থানচ্যুত করে এবং নারীকেও শুধু পণ্যরূপে টিকিয়ে রাখে। বাঙালির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় মহান মুক্তিযুদ্ধ। বলাবাহুল্য যুদ্ধটি পুরুষের বা নারীর ছিল না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানকে পুরুষতন্ত্র কার্যত স্বীকারই করতে চায় না। হারুন হাবীব মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদানের একটা ছোট্ট রূপরেখা তুলে ধরে তার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ সংকলনটি বিশেষভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে অপেক্ষাকৃত তরুণ লেখক-গবেষকদের কয়েকটি চিত্তাকর্ষক প্রবন্ধে। প্রতিটি প্রবন্ধ সম্পর্কে আলাদাভাবে লেখা যেতে পারে। আমরা বরং পাঠকের কাছে বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণ করব। নারীবাদী ও প্রথাবিরোধী সদ্যপ্রয়াত হুমায়ুন আজাদের নারীগ্রন্থে বিধৃত তার নারী ভাবনার একটা পরিচয় তুলে ধরেছেন সৌমিত্র দেব। আর বেশ ক’টি প্রবন্ধে লোকসংস্কৃতি, লোকজীবন, লোকসাহিত্য ও গ্রামীণ নারীর প্রান্তিক অবস্থানের কথা তুলে ধরেছেন জাকির তালুকদার, আনোয়ার হাসান, পাভেল পার্থ ও সাইমন জাকারিয়া। এর পাশাপাশি আদি ঢাকার নারী এবং নারীকেন্দ্রিক ঢাকাইয়া সংস্কৃতির কৌতূহলোদ্দীপক বর্ণনা পাওয়া যাবে আনিস আহামেদের রচনায়। আর তরুণ লেখক প্রত্যয় জসীম বাংলাদেশের নারী ঔপন্যাসিকদের যে তালিকাটি প্রণয়ন করেছেন, নিঃসন্দেহে নারী গবেষকদের তা কাজে লাগবে। কেবল নৈর্ব্যত্তিক তত্ত্ব, তথ্য ও বিশ্লেষণেই সংকলনটি সীমাবদ্ধ নয়। এ গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, দেশ-বিদেশের কয়েকজন বিশিষ্ট মহীয়সী নারীর জীবন ও সংগ্রামের কথা, তাদের অবদানের কথা তাদের ভাবনার কথা প্রবন্ধাকারে ও সাক্ষাৎকার হিসেবে তাদের বয়ানে তুলে ধরার চেষ্টা। এ দেশের মুসলমান নারীদের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় চিকিৎসক হিসেবে খ্যাত ভগ্নীদ্বয় জোহরা বেগম কাজী ও শিরীন কাজী সম্পর্কে আলমগীর সাত্তার, নূরজাহান মুরশিদ সম্পর্কে কাজী সুফিয়া আখতার এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতীক অং সান সুচি সম্পর্কে সোহরাব হাসানের লেখায় তাদের সম্পর্কে অনেক অজানা কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে। পক্ষান্তরে কাজী রোকেয়া সুলতানার নেওয়া সাক্ষাৎকার দু’টিতে যথাক্রমে নারীনেত্রী হেনা দাস এবং বেগম সম্পাদক নূরজাহান বেগম অন্তরঙ্গ ভঙ্গিতে নিজেদের জীবন ও সংগ্রামের কথা ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়া খ্যাতিমান কথাশিল্পী ও প্রাবন্ধিক পূরবী বসু, কথাশিল্পী ও প্রাবন্ধিক শাহাব আহমেদ, অধ্যাপক ড. জেবউননেছা ও জোবায়দা নাসরিনের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি নতুন প্রবন্ধ যুক্ত করেছি। ফলে গ্রন্থটি আরো সমৃদ্ধ হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সবশেষে আশা করব, এ সংকলনটি বাংলাদেশের নারী বিষয়ক পঠন-পাঠন ও গবেষণাকর্মে সহায়ক হবে।

Additional information

Cover

Condition

Language

Publisher

Author

ISBN

Edition

Pages

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “নারী : নানা প্রেক্ষিত (OLD)”

Your email address will not be published. Required fields are marked *