-22%

আব্বা হুজুরের দেশে (NEW)

Original price was: 300৳.Current price is: 234৳.

Add to Wishlist
Add to Wishlist

Description

“আব্বা হুজুরের দেশে” বইটির মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ এক বছর চল্লিশেক আগেকার কথা। আমি তখন কলেজের ছাত্র। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অবসানে এদেশ থেকে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের বিদায়ের প্রাক্কালে নানা ঘটনা প্রবাহে বাঙালি মুসলমান হিসেবে আমরাও সেদিন ধর্মান্ধতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিলাম। আমাদের মুখে তখন উচ্চারিত শ্লোগান : “হাথুমে বিড়ি মুমে পান, লড়কে লেংগে পাকিস্তান।” কিন্তু সেদিন আমরা কেনাে এমনটি কোরেছিলাম? কারণ একটাই এবং তা হচ্ছে বর্ণহিন্দু বুর্জোয়া ও জমিদার শ্রেণীর লাগামহীন শােষণ, বঞ্চনা আর ঘৃণা। তাই আমরা মুক্তির সন্ধানে’ উপমহাদেশের অবাঙালি খান্দানী খান্দানী মুসলমানদের সংগে গাঁটছড়া বাঁধলাম। রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সঙ্গাকে অবজ্ঞা করে ১৯৪৭ সালে প্রায় ১২ শ’ মাইল ভৌগােলিক ব্যবধানের দুটি এলাকা নিয়ে সৃষ্টি হলাে পাকিস্তান নামের একটি অদ্ভুত রাষ্ট্র। কিন্তু এই পাকিস্তানেও ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলাে। ধর্মের নামে বাঙালি গণমানুষের উপর জগদ্দল পাথরের মতাে চাপিয়ে দেওয়া হলাে এক নয়া উপনিবেশবাদী শাসন। এরই পাশাপাশি সুপরিকল্পিতভাবে বাংলা ভাষা, সাহিত্য আর সংস্কৃতির উপর এল অবিরাম হামলা। তবুও গাংগেয় বদ্বীপ এলাকার এই নিপীড়িত জনগােষ্ঠী চরম ধৈর্য্যের পরিচয় প্রদান করলাে। পঞ্চাশ আর ষাট দশকের এতােগুলাে বছর গণ-অভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন, একাত্তরের অসহযােগ আন্দোলন। চূড়ান্ত পর্যায়ে তৎকালীন পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত থেকে আকস্মিকভাবে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করলে সংগঠিত হলাে রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধ। সর্বত্রই বাঙালি জাতীয়তাবাদী শক্তির বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। ন’মাস ব্যাপী এই ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করেছি “আমি বিজয় দেখেছি” গ্রন্থে। অবশ্য সম্প্রতি একটি ছােট্ট অথচ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় আমার মনে হয়েছে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রায় ১৬/১৭ বছর পর বাংলাদেশের নতুন জেনারেশনের জন্য পাকিস্তানের ২৪ বছরের চাঞ্চল্যকর ঘটনাবলী সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অন্যথায়, স্বার্থান্বেষী মহল হয় এদের বিভ্রান্ত করবে—না হয় এরা মুক্তিযুদ্ধের যৌক্তিকতা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হবে। এ অবস্থাটা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। দুই সম্প্রতি একদিন বিকেলের পড়ন্ত রােদে আমার কনিষ্ঠ পুত্রের হাত ধরে রমনার সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেড়াতে গিয়েছিলাম। ওকে কথা দিয়েছিলাম, ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর পক্ষে ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লেঃ জেনারেল নিয়াজী ৯১,৫৪৯ জন সৈন্য নিয়ে কাপুরুষের মতাে যে স্থানে আত্মসমরপণের দলিলে দস্তখত কোরেছিলেন, ঠিক সেই জায়গাটাই দেখাবাে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম ও ঐতিহাসিক ঘটনা বিজড়িত সেই নির্দিষ্ট জায়গায় বহুদিন পরে দাঁড়িয়ে মাথা ঘুরিয়ে চারদিকটা একটু দেখে নিয়ে বললাম, “সােহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের এই সে ঐতিহাসিক জায়গা, যা তােমাকে দেখাবাে বলে ওয়াদা করেছিলাম।” কিন্তু ওর কথা শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। অবাক বিস্ময়ে পুত্র বলল, ‘আব্বা, এখানে তাে মাঠে ছােট ছােট ঘাষ আর কয়েকটা গাছ ছাড়া আর কিছুই নেই। এখানে হানাদার বাহিনীর ‘সারেন্ডার’-এর কোন চিহ্নই তাে দেখতে পাচ্ছি না! পাশেই শিশুপার্কে দোলনা ঝুলছে।” সেদিন ১১ বছরের পুত্রের প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারিনি। মাথা নীচু করে বাসায় ফিরে এসেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম বাংলাদেশের এই নতুন জেনারেশন-এর জন্য পাকিস্তানের ২৪ বছরের চাঞ্চল্যকর ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করবাে। এই সিদ্ধান্তের ফসল হচ্ছে, “আব্বা হুজুরের দেশে।” এরপরেও কথার পিঠে কথা থেকে যায়। যে বাঙালি মুসলমান ১৯৪৭ সালে ধর্মের জিগিরে মােহগ্রস্থ হয়ে পাকিস্তান আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েছিল, মাত্র ২৪ বছরে তাঁরা কোন প্রেক্ষাপটে “জয়বাংলা” শ্লোগান দিয়ে দেশমাতৃকার শৃংখল মুক্তির লক্ষ্যে অস্ত্র হাতে পাল্টা আঘাত হেনেছিল? সেই ঘটনাবহুল ২৪ বছরের ইতিহাস আমাদের নতুন জেনারেশন-এর কাছে উপস্থাপন করার জন্যই আমার এই বস্তুনিষ্ঠ বই—‘আব্বা হুজুরের দেশে। তিন এই গ্রন্থের নামকরণের জন্য আমি বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত একটি ধারাবাহিক নাটকের কাছে ঋণী। এই নাটকেই আমি জীবনে প্রথম “আব্বা হুজুর” এবং “আম্মা হুজুর” এই দুটি উদ্ভট শব্দ শুনেছিলাম। এমতাবস্থায় আমার স্থির বিশ্বাস, এখনও যখন ১৯৭২-এর ক্ষমাপ্রাপ্ত পাকিস্তানী মনােভাবাপন্ন ব্যক্তিরা বহাল তবিয়তেই রয়েছেন, তখন তাঁদেরই ব্যবহৃত ‘আব্বা হুজুর’ শব্দের জের ধরে ব্যাঙাত্মকভাবে এই গ্রন্থের নামকরণ ‘আব্বা হুজুরের দেশে’ করা যথার্থই হয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ শিল্পাচার্য কামরুল হাসানের অংকিত একটি ঐতিহাসিক পােস্টার অবলম্বনে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের তথ্য ও প্রচার দফতর থেকে এই জানােয়ারদের হত্যা করতে হবে’ শীর্ষক আলােচ্য পােস্টারটি প্রকাশিত হলে দেশ-বিদেশে দারুণ আলােড়নের সৃষ্টি হেয়েছিল। পােস্টারটির ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। এজন্য আমি শিল্পাচার্যের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বইটিতে আমার রচিত ‘পঞ্চাশ দশকে আমরা’ এবং ‘বাহান্নর জবানবন্দী’ গ্রন্থ দু’টি থেকে প্রয়ােজনীয় অংশের উদ্ধৃতি প্রদান করেছি। আব্বা হুজুরের দেশের বিশাল ঘটনাবলী একটি মাত্র খণ্ডে লিপিবদ্ধ করা সম্ভব হলাে না। শীঘ্রি পরবর্তী খণ্ড প্রকাশিত হবে।

Additional information

Cover

Condition

Language

Publisher

Author

ISBN

Edition

Pages

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “আব্বা হুজুরের দেশে (NEW)”

Your email address will not be published. Required fields are marked *