জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়
byমুহম্মদ জাফর ইকবাল
"জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়"বইটির প্রথমের কিছু অংশ: ১. আমার বাবা বাসায় ঢােকার আগেই বুঝতে পারলাম আজকে আমার কপালে দুঃখ আছে। ছােটখাট দুঃখ নয়, বড়ােসড়াে ডাবল সাইজের দুঃখ। বাইরে দড়িতে একটা লুঙ্গি ঝুলছে, তার মানে বাবা এসেছেন। শিউলী গাছের একটা ডাল আজকে আমার পিঠে ভাঙা হলে। বাসার এত কাছে শিউলী গাছ থাকার কোন অর্থই হয় না। সারা বছরে মাসখানেক তিন-চারটা ফুল দিয়েই তার কাজ শেষ, লাভের মাঝে লাভ বাবা যখন খুশি তখন পেটানাের জন্যে সেখান থেকে একটা ডাল ভেঙে আনতে পারেন। আমি ভয়ে ভয়ে ভিতরে ঢুকলাম। মনে খুব একটা দুর্বল আশা, দড়িতে যে লুঙ্গিটা কুলছে সেটা বাবার না, অন্য কারাে! গ্রামের বাড়ি থেকে কেউ বেড়াতে এসেছে, কারাে বিয়ে কিংবা অসুখ, জমি নিয়ে মামলা করতে এসেছে বা সে রকম একটা কিছু। ভিতরে ঢুকতেই আমার আশা ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেল। শুনতে পেলাম বাথরুমে বাবা ঘড়ঘড় শব্দ করে জিব পরিষ্কার করছেন। জিব পরিষ্কার করার এই ব্যাপারটা আমি বাবা ছাড়া আর কাউকে কখনাে করতে দেখিনি। প্রথমে একটা চিকন বাশের চাছ দিয়ে জিবটা চেঁছে ফেলেন। তারপরে শােল মাছ ধরার মত নিজের জিবটা ধরার চেষ্টা করতে থাকেন, সেটা বারবার পিছলে যায়, তবু তিনি হাল ছাড়েন না। একবার ধরার পর সেটা নানাভাবে কচলাতে থাকেন, ঘষতে থাকেন, রগড়াতে থাকেন, তখন একই সাপ তারলা থেকে এক রকম ঘড়ঘড় শব্দ বের হতে থাকে। শুনলে মনে হবে কেউ বুঝি তাকে জবাই করে ফেলার চেষ্টা করছে। পুরাে ব্যাপারটাই একটা খুব খারাপ দৃশ্য, দেখার মত কিছু নয়। মাসে এক-দুইবার যখন বাবা আসেন তখন আমাদের প্রত্যেক বেলা সেই দৃশ্যটা দেখতে হয়, শুনতে হয়। বাবা ঢাকায় একটা ওষুধের কোম্পানিতে কাজ করেন। কত টাকা বেতন পান এবং ঘুষ খেয়ে চুরি-চামারী করে আরাে যত পয়সা পান সব দিয়ে আমাদের সবাইকে নিয়ে খুব সহজেই ঢাকায় একটা বাসা ভাড়া করে থাকতে
লেখক | : | মুহম্মদ জাফর ইকবাল |
প্রকাশনী | : | জ্ঞানকোষ |
বিষয় | : | শিশু-কিশোর উপন্যাস |
সংস্করণ | : | 1995 |
কভার | : | hardcover |
ISBN | : | 9847027700459 |
পৃষ্ঠা সংখ্যা | : | 80 |